You are currently viewing ফ্রীল্যানসিং গাইডলাইন। রাইট স্টেপস ফর বিগিনার

ফ্রীল্যানসিং গাইডলাইন। রাইট স্টেপস ফর বিগিনার

আপনি হয়তো ভাবছেন যে আপনি নিজেকে একজন ফ্রীলান্সার হিসেবে গড়ে তুলবেন, কিন্তু জানেন না কোথা থেকে আর কিভাবে শুরু করবেন, তাহলে এই ফ্রীল্যানসিং গাইডলাইন সম্পূর্ণ আপনারই জন্য। এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন ফ্রীল্যানসিং কি, ফ্রীল্যানসিং কাদের জন্য, ফ্রীলান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনার কি কি জানা উচিত এবং ফ্রীলান্সার হিসেবে কিভাবে আপনার ফিনান্সিয়াল ফ্রিডমটি গড়ে তুলবেন।

দেখুন, ফ্রীল্যানসিং ক্যারিয়ার গড়া অতটা সহজ নয় যতটা সহজ হয়তো আপনি ভাবছেন। বর্তমানে মিডিয়ার প্রচারণা এবং অতিরিঞ্জিত উপস্থাপনার কারণে অনেকেই মনে করে শুধুমাত্র একটি ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই আপনি হাজার হাজার ডলার ইনকাম করতে পারবেন।

ব্যাপারটি ভয়ানকভাবে মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ ভুল এবং এই অতি সহজ ভেবে সামনে পিছনে না তাকিয়ে হুট করে ফ্রিল্যান্সিং নামক মহাসমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে বেশীর ভাগ মানুষ এখানে ব্যার্থ হয়, আর এভাবেই হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন ভাঙ্গে। তাই ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আমাদের এই ফ্রিল্যান্সিং a to z গাইডলাইনটা সম্পূর্ণ পড়ে ও বুঝে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।

আমাদের এই আর্টিকেলটিতে পেয়ে যাবেন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার গাইডলাইন এর সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি কাজ করা যায়, এবং Freelancer এ কাজ করার নিয়ম যা আপনাকে সাহায্য করবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে।

ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি 

ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরু করতে প্রথমেই যে বিষয়টা জানা উচিত ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কোন কাজের চাহিদা বেশি কারণ বিষয়টা যদি এমন হয় আপনি যে কাজটা দিয়ে শুরু করলে কিছুদিন পর মার্কেট থেকে সেই কাজটা হারিয়ে গেল বাডিমান কমে গেল তখন আপনি হতাশ হয়ে পড়তে পারে তাই ক্যারিয়ার শুরু করার বিষয়ে এই জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা উচিত।

অনলাইন ভিত্তিক ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে বর্তমান মার্কেটে ডিমান্ড স্কিলগুলো একনজরে দেখে নিন।

হাই ডিমান্ড স্কিলস ইন মার্কেট-

  • সাইবার সিকিউরিটি
  • প্রোগ্রামিং
  • সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড নেটওয়ার্কিং
  • ডেটা এনালাইসিস
  • ডেভেলপমেন্ট এন্ড অপারেশন
  • ক্লাউড কম্পিউটিং
  • মেশিন লার্নিং

অনডিমান্ড স্কিলস ইন মার্কেট-

  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • এসইও
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ওয়েব ডিজাইন
  • সোশ্যাল মিডিয়া ডিজাইন
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং
  • ভিডিও এডিটিং
  • কন্টেন্ট রাইটিং

যদি আমরা ক্যাটাগরি ওয়াইজ চিন্তা করি তাহলে বিষয়টা এরকম দাঁড়াবে যে, আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে অ্যাডমিন সাপোর্ট নামে একটা ক্যাটাগরি যেখানে এই ক্যাটাগরির ডিমান্ড অনুযায়ী স্কিলগুলো হবে-

  • ডাটা এন্ট্রি
  • লিড জেনারেশন
  • ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
  • ইমেইল হ্যান্ডেলিং
  • ইমেইল লিস্ট বিল্ডিং
  • ওয়েব রিসার্চ
  • মার্কেট রিসার্চ
  • প্রোডাক্ট লিস্টিং
  • ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্ট

এখানে মজার বিষয় হলো যে, কোনো ক্যাটাগরির সবগুলো বিষয় আপনাকে জানতে হবে না, তবে জানলে আপনার জন্যই ভালো। কারণ একটি স্কিল আপনার বেশি জানা থাকলে অন্যের চেয়ে আপনি সবসময় বেশি এগিয়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।

ফ্রীল্যানসিং গাইডলাইন

স্টেপ নাম্বার ১: ফ্রীল্যানসিং এর শুরুতে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট লিস্ট

ফ্রীল্যানসিং করতে এসে প্রথেমই সবাই খুব দ্রুত টাকা ইনকাম করতে চায়, যেটা তার ক্যারিয়ার এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রথমেই বলে রাখছি ফ্রীল্যানসিং মানে খুব দ্রুত টাকা ইনকাম করে বড়োলোক হওয়ার জন্য শর্টকাট কোনো রাস্তা নয়। বর্তমান প্রজন্ম অনেকটা মোবাইল নির্ভর হওয়ার কারণে অনেকের মনেই এই প্রশ্নটা আসে যে তারা মোবাইল দিয়ে ফ্রীল্যানসিং করতে পারবে কি না?

আসলে ফ্রীল্যানসিং হলো একটা প্রফেশনাল লাইফ, সুতরাং এখানে সবকিছুই আপনাকে প্রফেশনালি থিঙ্ক করতে হবে। তাই অনলাইনে কাজ করতে চাইলে আপনার অবশ্যই একটি ল্যাপটপ অথবা ডেস্কটপ কম্পিউটার লাগবে, মোটামুটি ভালো মানের ইন্টারনেট কানেকশন, ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন এর জন্য হেডফোন অথবা মাইক্রোফোন ও তার সাথে একটি ওয়েবক্যাম হলে ভালো হয়।

স্টেপ নাম্বার ২: নিজের ইন্টেরেস্ট ও মার্কেটপ্লেস উপযোগী একটা স্কিল সেট করা

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে নিজেকে মার্কেটপ্লেসে উপস্থাপন করা এই বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, ক্লায়েন্টকে আপনি কি ধরণের সার্ভিস প্রোভাইড করতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে শুধু আপনার ইন্টারেস্ট অনুযায়ী স্কিল গড়ে তুললেই চলবেনা পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত হতে হবে মার্কেটপ্লেসে সেই কাজের চাহিদা কেমন এবং পরবর্তী ১০-১২ বছরে এর ভবিষ্যত কি হতে পারে? যদি আপনার স্কিলসেট অনুযায়ী মার্কেটপ্লেসে প্রচুর জব পোস্টিং হয় তাহলে আপনি ধরেই নিতে পারেন আপনার স্কিলসেট একটা সোনার খনির মতো যা দিয়ে আপনি দীর্ঘদিন কাজ করে যেতে পারবেন।

স্টেপ নাম্বার ৩: নিজের স্কিলটাকে ধারাবাহিকভাবে আপডেট রাখা-

প্রযুক্তি এমন একটা জিনিস যেটা রেগুলার আপডেট হতেই থাকে, সুতরাং আপনি যে স্কিল দিয়ে আপনার ক্লায়েন্ট কে সার্ভিস দিতে চান সেটাতে অবশ্যই আপনার ভালো দখল রাখতে হবে এবং আপনাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থেমে থাকলে আপনি অটোমেটিক্যালি পিছিয়ে পারবেন। আপনি বুঝতেও পারবেন না যে কখন আপনি মার্কেটপ্লেস থেকে ছিটকে পরে গেছেন।

সুতরাং প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আপনার স্কিলসেটকে রেগুলার আপডেট রাখতে আপনি নিয়মিত আপডেট ফিচার, ব্লগ, আর্টিকেল পড়তে হবে। এছাড়াও স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য ইউটিউব এর আপডেট ভিডিওগুলো দেখতে পারেন। মোটকথা নিজেকে মার্কেটপ্লেসে টিকিয়ে রাখতে যেটা দরকার আপনাকে সেটাই করতে হবে।

স্টেপ নাম্বার ৪: সততা নিয়ে কাজ করে রেপুটেশন গড়ে তোলা-

মার্কেটপ্লেসে সাধারণত কোনো ক্লায়েন্টই আপনার এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড বা ডিগ্রী নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না, কিন্তু আপনি ক্লায়েন্টকে আপনি যে সার্ভিসটা দিচ্ছেন সেই স্কিল এর মানদন্ড নির্ভর করবে তখনি, যখন একটি ক্লায়েন্ট আপনার কাজে খুশি হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনাকে ফিডব্যাক প্রদান করবে, এই ফীডব্যাকটাই আপনার সার্টিফিকেট। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনি যে কাজটা পারেন সেই কাজটার জন্যই আপনি ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেন, যে কাজটা আপনি পারবেন না অহেতুক সেসব কথা বলে নিজেকে বিপদের মুখে ফেলবেন না।

স্টেপ নাম্বার ৫: দক্ষতা অনুযায়ী পোর্টফোলিও তৈরি করা-

ক্লায়েন্টকে সার্ভিস প্রোভাইড করার পর ক্লায়েন্ট এর ফিডব্যাক অনুযায়ী নিজের দক্ষতার প্রমাণ স্বরূপ কাজের পোর্টফোলিও তৈরি করুন, এবং পরবর্তী ক্লায়েন্টকে আপনার কাজের প্রমাণ হিসেবে দেখান এতে ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবেন আপনি এই কাজের জন্য কতটা দক্ষ। এছাড়াও আপনার কাজের প্রমাণস্বরূপ নিজস্ব একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট করতে পারেন যেখানে আপনি রেলিভেন্ট কাজগুলো রাখতে পারেন।

স্টেপ নাম্বার ৬: পার্ট টাইম হিসেবে শুরু করা-

ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরুর দিকে প্রথমে আপনি পার্টটাইম শুরু করা উচিত। কারণ একটি প্লাটফর্মে কাজ শুরু করতে চাইলে প্রথমদিকে বুঝে নিতে কিছুদিন সময় লাগবে। সেই হিসেবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি অন্য যেকোনো একটি পেশার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার স্টার্ট করতে পারেন। তারপর একটা দুইটা কাজ করতে করতে এক্সপেরিয়েন্সড হয়ে গেলে ফুলটাইম দিতে পারেন।

স্টেপ নাম্বার ৭: সঠিক মার্কেটপ্লেস বাঁছাই করা-

ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে মার্কেটপ্লেস সিলেকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই হিসেবে বিগিনার হিসেবে Fiverr দিয়ে স্টার্ট করতে পারেন। এছাড়াও বর্তমানে অনেক মার্কেটপ্লেস আছে যেগুলো বিগিনারদের জন্য অনেক ভালো। তবে প্রথমদিকে যে সাইটগুলিতে কাজের কম্পিটিশন কম সেই সাইটগুলোতে ট্রি করা ভালো।

স্টেপ নাম্বার ৮: কাজের দক্ষতা অনুযায়ী প্রাইসিং ফিক্স করা-

ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার এ প্রাইসিং একটা কমন ফ্যাক্ট। অপ্রয়োজনেই আমরা কাজ নেয়ার জন্য কাজের রেট কমিয়ে ফেলি কিন্তু দিনশেষে আমরা নিজেরা নিজেদেরই ক্ষতি করি, এই মনোভাব পরিহার করতে হবে এবং সঠিক কাজের জন্য সঠিক চার্জ করা শিখতে হবে। কিন্তু ক্যারিয়ার শুরুর দিকে যতটা সম্ভব কম প্রাইসে কাজের অফার দেয়া উচিত।

স্টেপ নাম্বার ৯: সঠিক নিয়মে প্রপোজাল পাঠানো-

ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার এ ৯০% ফেইল করে এই প্রপোজাল লেটার লিখতে। আসলে প্রপোজাল লেটার লেখা অনেকের কাছেই ঝামেলা মনে হয়। আবার অনেকেই ভুলভাল প্রপোজাল সেন্ট করে থাকে। কিন্তু জব এ হায়ার হওয়ার প্রথম স্টেপই হচ্ছে সুন্দর একটা প্রপোজাল লেখা। আর প্রপোজাল লিখতে বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে যেমন-

  • আপনি বায়ার এর কাজটা বুঝতে পেরেছেন কি না
  • বায়ারকে আপনি সঠিকভাবে কাজ ডেলিভারি দিতে পারবেন এই নিশ্চয়তা প্রদান করা
  • নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ ডেলিভারি করার আশ্বাস প্রদান করা
  • কাজের প্রমাণ হিসেবে স্যাম্পল প্রদান করা
  • ক্লায়েন্ট কিছু না বুঝলে তাকে সহযোগিতা করা
  • প্রয়োজনে ভিডিও কলে আহবান করা
  • সঠিক সময়ে রেসপন্স করতে পারবেন

উপসংহার:

পরিশেষে বলবো ফ্রিল্যান্স লাইফ মানে কমিটমেন্ট রক্ষা করে চলা। সাধারণ চাকুরীর মতো ভাবলে এটা চলবে না, বরং সাধারণ চাকুরীতে আপনি যা করেছেন তার চেয়েও বেশি সময় এখানে আপনাকে দিতে হবে। আর হাল তো ছেড়ে দেয়াই যাবে না, কারণ আপনাকে বুঝতে হবে অন্য কেউ যেহেতু করছে, তার মানে আপনিও পারবেন আর আপনাকে পারতেই হবে, এই মনোবল ও মনোভাব সবসময় রেখে পথ ধরে চলতে হবে, হ্যাঁ এটাই বাস্তব। আশা করি আমাদের এই ফ্রীল্যানসিং গাইডলাইন আপনাকে পরিপূর্ণ ভাবে সাহায্য করবে একটি সঠিক ক্যারিয়ার বাছাই করতে।

শুভকামনা-

Leave a Reply